লাগাম না টানায় বেপরোয়া ছিল বিআরটিএর এডি আ. জলিল- পর্ব-০২

ড্রাইভিং লাইসেন্স পটুয়াখালী বিআরটিএর, ইস্যু হয় এডির মিরপুরের বাসায়

Passenger Voice    |    ১২:৩৭ পিএম, ২০২২-০৭-০৩


ড্রাইভিং লাইসেন্স পটুয়াখালী বিআরটিএর, ইস্যু হয় এডির মিরপুরের বাসায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ "চল, জলিলের বাড়ি ঘেরাও দিমু", এই লাইনের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? ফজলুর রহমান বাবু অভিনীত এসিড বিক্রি প্রতিরোধে ২০০১ সালের দিকে বিটিভির সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপন। বিআরটিএর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মোটাঅংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সড়ক দুর্ঘটনার মতো ভয়াভহ পরিস্থিতিতে ফেলার যে অপচেষ্টা হচ্ছে, বিষয়টি অনুধাবন করে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ২০০১ সালের মতো বিআরটিএতে ঘুষের বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু প্রতিরোধে “চল জলিলের বাড়ি ঘেরাও দিমু” বিজ্ঞাপনটি প্রতিটি চ্যানেলে চালু করা হউক।

বিআরটিএর কতিপয় দুর্নীতিবাজ ভয়ঙ্কর লাইসেন্স জালিয়াতকারী সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শককের অপকর্ম নিয়ে সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন বিআরটিএ সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি নিয়ে অনুসন্ধান করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। আজ ২য় পর্বে থাকছে লাগাম না টানায় বেপরোয়া বিআরটিএর বরগুনা-পটুয়াখালী সার্কেলের সহকারী পরিচালক আ. জলিল মিয়া ও মোটরযান পরিদর্শক রুকুনুজ্জামান। 

বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আ. জলিল মিয়া বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক থাকাকালীন তিনি ঘরে বসে বিভিন্ন বিআরটিএর অবৈধ ফিটনেস সনদ ইস্যু করতেন। সেই সময়ে তার মিরপুরের বাসা একবার ঘেরাও করেছিল মোটরযানের মালিক-শ্রমিকরা। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সে সময়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। 

গত ৩০ জুন “দুদকের মামলায়ও নড়েনি এই কর্মকর্তার ক্ষমতার খুঁটি” ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতিঃ বিআরটিএর যন্ত্রণা এডি জলিল মিয়া” শিরোনামে বিআরটিএর বরগুনা সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতির তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল প্যাসেঞ্জার ভয়েস। প্যাসেঞ্জার ভয়েসে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স নড়েচড়ে বসলেও ঘুম ভাঙ্গেনি বিআরটিএর। বরগুনা বিআরটিএর একই ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করেছে পটুয়াখালী বিআরটিএ’তে। বিআরটিএ’র সদর কার্যালয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে অপকর্ম চালাতো এই দুই কর্মকর্তা। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার পর ৩/৫ অথবা ৭ দিনের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ইস্যুকরার জন্য বায়োমেট্রিক গ্রহন করা হতো। এবং ২৭ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সদর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে স্মার্ট কার্ড ডেলিভারি প্রদান করতো গ্রাহককে। পরে ২ মাস শেষ হলে ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ডের রেজুলেশন তৈরি করতো এই দুই কর্মকর্তা । 

সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত বিআরটিএর পটুয়াখালী সার্কেলে মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স বায়োমেট্রিক গ্রহনের জন্য ডাটা এন্টি করেছে ২৮৪০ টি এর মধ্যে বায়োমেট্রিক গ্রহন করা হয়েছে ২৮০২ জন গ্রাহকের। এই ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে সর্বনিম্ন গড়ে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করে সর্বমোট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা অবৈধ আয় করেছে এই দুই কর্মকর্তা। 

পটুয়াখালী বিআরটিএর ইস্যু করা ২০০ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অনুসন্ধান করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। চলতি বছরের প্রিন্ট হওয়া PK00001410C00001,  PK00001411CL0001, PK00001412C00001, PK00001413C00001, PK00001414C00001, PK00001415CL0001, PK00001416C00001,,PK00001417CL0001, PK00001418C00001, PK00001419CL0001,,PK00001420C00001, PK00001421CL0001, PK00001422C00001 , PK00001423CL0001, PK00001424CL0001, PK00001425CL0001, PK00001426CL0001, PK00001427C00001, PK00001428CL0001, PK00001429C00001, PK00001430CL0001,PK00001431C00001,PK00001437C00001, PK00001438C00001,PK00001439CL0001,PK00001470CL0001, PK00001471C00001, PK00001472C00001, PK00001473C00001,PK00001474CL0001, PK00001475C00001, PK00001476C00001, PK00001477CL0001, PK00001478CL0001, PK00001479C00001, PK00001480C00001, PK00001481C00001,PK00001482CL0001,
PK00001483C00001, PK00001484CL0001,PK00001485CL0001,PK00001486C00001,
PK00001488L00001,PK00001491CL0001,PK00001494CL0001,PK00001497CL0001,
PK00001498CL0001,PK00001499CL0001,PK00001501CL0001,PK00001502CL0001,
PK00001503CL0001,PK00001505CL0001,PK00001507CL0001,PK00001508CL0001,
PK00001509CL0001,PK00001510L00001,PK00001511CL0001,PK00001512CL0001,
PK00001524CL0001,PK00001525CL0001,PK00001526CL0001,PK00001527CL0001,
PK00001528CL0001,PK00001529CL0001,PK00001530CL0001,PK00001531CL0001,
PK00001532CL0001,PK00001533CL0001,PK00001534CL0001,PK00001535CL0001,
PK00001536CL0001,PK00001537CL0001,PK00001538CL0001,PK00001539CL0001,
PK00001540CL0001,PK00001541CL0001,PK00001542CL0001,PK00001543CL0001,
PK00001544CL0001,PK00001545CL0001,PK00001546CL0001,PK00001547CL0001,
PK00001548CL0001,PK00001549CL0001,PK00001551CL0001,PK00001553C00001,
PK00001554C00001,PK00001555CL0001,PK00001556CL0001,PK00001557C00001,
PK00001558CL0001,PK00001559C00001,PK00001560CL0001,PK00001561C00001,
PK00001562CL0001,PK00001563CL0001,PK00001564CL0001,PK00001565C00001,
PK00001566CL0001,PK00001579CL0001,PK00001582CL0001,PK00001586C00001,
PK00001587C00001,PK00001588C00001,PK00001589CL0001,PK00001590CL0001,
PK00001591C00001,PK00001592C00001,PK00001593C00001,PK00001594L00001,
PK00001595L00001,PK00001596CL0001,PK00001597L00001,PK00001598L00001,
PK00001599L00001,PK00001600L00001,PK00001601L00001,PK00001602L00001,
PK00001603L00001,PK00001604L00001,PK00001605L00001,PK00001607CL0001,
PK00001608CL0001,PK00001609CL0001,PK00001610C00001,PK00001611CL0001,
PK00001612CL0001,PK00001613C00001,PK00001614CL0001।  প্রিন্ট হওয়া শুধু এই লাইসেন্স গুলো নই। এই সার্কেলের সকল ইস্যু করা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

আগামী পর্বে পড়ুন >>> পাবনা বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স কেলেঙ্কারি। 

এই ড্রাইভিং লাইসেন্স গুলোর বেশির ভাগ বায়োমেট্রিক গ্রহন পটুয়াখালীর বাহিরে হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন। তবে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের অনলাইন অডিট রিপোর্টে তার সত্যতা পাওয়া যাবে।মাদ্রাস সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকার মো. তারেক প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন এইসব লাইসেন্স এর সমস্ত ডাটা পটুয়াখালী বিআরটিএ সার্কেলে এন্টি হয়েছে এবং বায়োমেট্রিকও এখানে হয়েছে। 

তবে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের একটি সূত্র বলছে লক্ষীপুর জেলার চরচামিতা গ্রামের ছেলে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার গাড়ির শোরুম নাফি ট্রেডার্স এর মালিক জিয়াউর রহমান, ২৩/৬ পশ্চিম যাত্রাবাড়ি এলাকার কাশেম, এবং লক্ষীপুর এলাকার আরেক দালাল শাকিল মিলে পটুয়াখালী বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আব্দুল জলিল মিয়ার সাথে এই সব অপকর্ম করেছে। 

বিআরটিএর এই দুর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করতে বারবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসের ফোন রিসিভ করেন নি। 

অনিয়ম দুর্নীতি ও লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত মোটরযান পরিদর্শক রুকুনুজ্জামানের সাথে। তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, পটুয়াখালীর লাইসেন্স এর বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আপনি পটুয়াখালী সার্কেলের সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শকের কাছে জানুন। 

রুকুনুজ্জামানের সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় পটুয়াখালী সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের সাথে । তিনি বলেন, আমি জানুয়ারী মাসে এই সার্কেলে যোগদান করেছি আজকে পর্যন্ত আমাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কোন প্যানেল বিআরটিএর ইস্যু করেনি। তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে হয়েছে সেটা দায়িত্বে থাকা মোটরযান পরিদর্শক রুকুনুজ্জামান বলতে পারবে। 

বিআরটিএর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক জিয়াউর রহমান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আমি বরগুনা-পটুয়াখালী সার্কেলের ইস্যু করা সকল ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করতে পরিদর্শনে যাব, তথ্য প্রমান পাওয়া গেলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।